ঢাকা    সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪   সন্ধ্যা ০৭টা ৩১ মিনিট   গণমাধ্যমের শিরোনাম

লেবাননে ইসরায়েলি হামলা

প্রকাশক: সমকাল

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ‘কঠোর প্রতিশোধ ও যথাযথ শাস্তি’ দেওয়ার হুমকির কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েল পেজার ও ওয়াকিটকিতে লুকানো বিস্ফোরক দিয়ে হিজবুল্লাহকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে। 

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছিল, তারা শত শত রকেট লঞ্চারে আঘাত করেছে। তারা ‘অবিলম্বে’ এ হামলা চালাবে, বলেছিল। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ৫২টি বোমা হামলা হয়েছে। লেবাননের তিনটি নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর এটিই সবচেয়ে বিধ্বংসী বিমান হামলা।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা বৃহস্পতিবার প্যারিসে সাক্ষাৎ করেছিলেন। শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্ধারিত সভার আগেই এ সাক্ষাৎ হয়েছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন কায়রোতে গাজা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করার পর ফ্রান্সের রাজধানীতে অন্যান্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, জো বাইডেন এখনও ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে একটি কূটনৈতিক সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন। হোয়াইট হাউস সব পক্ষকে ‘যে কোনো ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি’র বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বু হাবিব সতর্ক করেছিলেন, ‘লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর নির্লজ্জ আক্রমণ’ বিপজ্জনক পরিণতি, যা ‘বিস্তৃত যুদ্ধের সংকেত’ হতে পারে। 

বৃহস্পতিবার নাসরুল্লাহর ভাষণটি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলেছেন, হিজবুল্লাহ নেতাকে উত্তেজনা আর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি না দিয়ে ইসরায়েলকে এড়িয়ে যাওয়া দরকার ছিল। তা না হলে পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা তেহরানে হিজবুল্লাহর পৃষ্ঠপোষকরা এড়াতে চেয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর মনোবলহীন অনুসারীদের নিয়ে সমাবেশ করারও প্রয়োজন ছিল।
সুইডিশ ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ও হিজবুল্লাহ নিয়ে পশ্চিমা পাঠের অগ্রদূত ম্যাগনাস রেনস্টোর্প বলেছেন, ‘একটি সংগঠনের জন্য এ ঘটনা বিশাল এক অপমান, যা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে গর্ব করে। তাদের একটি ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। এতে কিছু বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বেশির ভাগই হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত। তারা এখন কিছু সময়ের জন্য নিষ্ক্রিয় থাকবে।’
হিজবুল্লাহ হলো ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষের’ একটি প্রধান সদস্য, যেখানে রয়েছে হামাস, হুথি ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠী। ইরানের রাষ্ট্রীয় বরাতে জানা গেছে, রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডার হোসেন সালামি বৃহস্পতিবার নাসরুল্লাহকে বলেছেন, ইসরায়েল ‘প্রতিরোধের অক্ষ থেকে একটি বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া’র মুখোমুখি হবে। 

এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, বিস্ফোরণের ব্যাপারে লেবাননের একটি তদন্তের প্রাথমিক ফল হলো, পেজাররা গুপ্ত ফাঁদে পড়েছিল। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘তথ্য নির্দেশ করে যে, ডিভাইসগুলো বিস্ফোরণের জন্য আগেই সাজানো ছিল। আর ব্যাটারির পাশে বিস্ফোরক পদার্থ লাগানো রয়েছে।’ 
অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধা, কিন্তু ১০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক ছিল। উত্তর ইসরায়েলে লেবাননের হামলায় কমপক্ষে ২৩ সেনা এবং ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমান্তে থাকা ৬০ হাজার ইসরায়েলিকে তাদের বসতভিটা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হিজবুল্লাহদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ভয়ে তারা আর ফিরতে পারেনি। 

অ্যামি সেদগি: গার্ডিয়ানের সাংবাদিক; ইংরেজি থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম