মানুষের জীবনে এমন কিছু নেতিবাচক অভ্যাস আছে যা তাদেরকে মানসিক বিষন্নতার মধ্যে ঠেলে দেয়। আর এই বিষন্নতা যদি দিনের পর দিন মানুষকে ঘিরে রাখে তাহলে মনের সঙ্গে সঙ্গে একটা সময় যা শরীরের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।
আজকে এমন ৬টি নেতিবাচক অভ্যাস সম্পর্কে জানবো যা আপনাকে সব সময় বিষণ্ণ করে রাখে। চলুন জেনে নেই।
১. অলস জীবন-ধারা
আসীন জীবন-ধারার অর্থ হল শারীরিক পরিশ্রম না করা বা ব্যায়াম না করা। বর্তমানের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অনেকেই ব্যায়াম করার সময় পান না কিন্তু এই ব্যায়াম না করার ফলে অনেক সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আপনি যদি প্রতিদিন ২০মিনিট ব্যায়ম করেন তাহলে দেখবেন শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই আপনি বেশ প্রফুল্ল অনুভব করছেন। ব্যায়াম করার জন্য আপনাকে জিমে যেতে হবে না। আপনি ঘরে বসেই যোগব্যায়াম করতে পারেন কিংবা অফিসে যাওয়ার সময় কিছুটা পথ হেটে যেতে পারেন। অর্থাৎ দিনের কিছুটা সময় শারীরিক পরিশ্রম আপনাকে করতেই হবে তবেই বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি মিলবে।
২. অতিরিক্ত সময় মোবাইল বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকা
অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে চোখের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি আপনার কার্যক্ষমতাও কমে যায়। তাছাড়া এই ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রগুলোর নীল আলো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই দিনের বেলা অতিরিক্ত সময় মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে বসে না থেকে শখের কোনো কাজ করুন। যেমন বাগান করা, বই পড়া, রান্না করা। এই কাজগুলো করে নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন যাতে মন মোবাইল বা কম্পিউটারের দিকে না যায়।
৩.পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে আপনার মন-মেজাজেও পরিবর্তন আসে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, ঘুমানোর ও ঘুম থেকে উঠার সঠিক সময় না থাকা, ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা এই কাজগুলো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই ঘুমানোর আগে এই কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘুমানোর ও ঘুম থেকে উঠার সময় নির্দিষ্ট করতে হবে। চাইলে আপনি ঘুমানোর আগে কিছুটা সময় মেডিটেশন করতে পারেন।
৪.অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত ফাস্টফুড,চিনিযুক্ত খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবারগুলো আপনাকে শারীরিকভাবে অলস এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত করে রাখে। এই খাবারগুলোতে কোনো রকমের পুষ্টিগুণ নেই যা আপনার শরীরের কোন উপকারে আসবে। বরং এই খাবারগুলো আপনার শরীরে নানা রোগের বাসা তৈরি করতে সহায়তা করে। আর যখন আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি বিষণ্ণতায় ভুগবেন। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। আপনার খাদ্য তালিকায় তাজা ফল, সবুজ শাক-সবজি, বিভিন্ন শস্যদানা, চর্বিহীন প্রোটিন রাখতে পারেন। এই খাবারগুলো আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে আর শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বিষণ্ণতা আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
৫. নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতা
হীনমন্যতা এমন একটি জটিল ভাবনা যার অনুভূতিগুলো আসলে কল্পিত। আর এই ভাবনার ফলে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় তা অন্যের চেয়ে নিজেকে অনেক ছোট করে দেয় নিজের কাছে। আর এর ফলে আত্ববিশ্বাস কমে যায়। সবসময় নিজেকে সমালোচনা করা, নিজের ভুলগুলো দেখা, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার ফলে বিষণ্ণতার সৃষ্টি হয়। তাই নিজেকে সমালোচনা না করে উৎসাহ দিতে হবে । আমি পারবো এই মনোভাব নিয়ে সব সময় চলতে হবে তবেই বিষণ্ণতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৬.সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
দীর্ঘদিন সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকলে আপনি বিষণ্ণ হয়ে যাবেন। মানুষ সামাজিক প্রাণী। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষ টিকে থাকতে পারে না। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আপনি একাকীত্বে ভুগবেন যা আপনাকে আরও বিষণ্ণ করে তুলবে। তাই পরিবার, বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করুন । এই ফলে আপনার একাকীত্বও দূর হবে এবং আপনি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকবেন।