ঢাকা    সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪   সন্ধ্যা ০৭টা ৪২ মিনিট   গণমাধ্যমের শিরোনাম

সকালে মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটার যতো উপকার

প্রকাশক: যুগান্তর

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

২০০১ সালে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন নিকি। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। নিকির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল— মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার সহজ উপায় কী। তিনিও মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়ার কথা বলেছেন। শুধু ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

ভারতের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত দেবযানী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুধু ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি। ছেলেবেলায় দাঁত মাজিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটাও দিয়ে দিতেন বাবা-মা। চোখেমুখে বুলিয়ে দিতেন ঠান্ডা পানি ভেজানো হাত। একটু বড় হয়ে যখন সকালে উঠে বই নিয়ে বসতে হতো, তখন মনে হতো অভ্যাসটা আসলে তৈরি করা হয়েছিল সদ্য জেগে ওঠা চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর জন্য। ঘুমচোখে পানির ঝাপটা দিলে গায়ে জ্বর আসত তখন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় হওয়ার পরও অভ্যাসটা রয়ে গেছে। আর এতদিন পর জানতে পারছি, ছোটবেলায় ওই অভ্যাস তৈরি করে কতটা উপকার করেছিলেন বাবা-মা।

সম্প্রতি একটি পডকাস্টে চিকিৎসক বিশাখা শিবদাসনির পরামর্শ শুনে অবাক হন দেবযানী। তিনি বলেন, বুঝতেই পারিনি, অজান্তেই নিজের কতটা উপকার করেছি।

দেবযানী বলেন, বিশাখা আলোচনা করে বলেছেন— সকালে উঠে চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়ার উপকারিতা নিয়ে। সকালে মুখে শুধু ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আমরা আমাদের মানসিক চাপ আর উদ্বেগকে অনেকটা দূরে রাখতে পারি।

বিশাখার কথার সঙ্গে মিলে গেছে যাপনসহায়ক এবং লেখিকা নিকি রসকোর বক্তব্যও। ২০০১ সালে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হন ব্রিটেনের বাসিন্দা নিকি। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সেই জায়গা থেকে ফিরে এসে নিজেকে একজন যাপন সহায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জীবনযুদ্ধে যারা ঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন। বইও লিখেছেন এ নিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে নিকির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য কোনো একটা জিনিস বলুন, যা থেকে সবাই উপকার পেতে পারেন। নিকি একবাক্যে জানিয়েছেন—এক মুহূর্তে মেজাজ ঠিক করার জন্য টোটকা হলো মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া। এতে আপনার দৈনন্দিন মানসিক চাপ যেমন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, একই সঙ্গে এটি মনকে শান্ত করে যে কোনো সমস্যার মোকাবিলা করার শক্তিও জোগায়।

ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের গবেষকরা মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটার উপকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা শুরু করেছিলেন ২০২২ সালে। প্রায় এক বছর ৫ মাস ধরে চলে সেই গবেষণা। লন্ডনের ব্রেন্ট রিসার্চ এথিক্স কমিটির দ্বারা অনুমোদন প্রাপ্ত সেই গবেষণাপত্র বলছে— মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা নিঃসন্দেহে মানব স্নায়ুতন্ত্রের দীর্ঘতম স্নায়ু ভেগাসকে সক্রিয় করে তোলে। যে স্নায়ু মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। উদ্বিগ্ন হলে বা মানসিক চাপ তৈরি হলে বা বিপদে পড়লে মানব শরীরের যেসব প্রতিক্রিয়া হয়, ভেগাস সক্রিয় হয়ে সেসব কিছু শান্ত করতে পারে।