ঢাকা    মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪   রাত ১২টা ০০ মিনিট   গণমাধ্যমের শিরোনাম

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের এ কী হাল

প্রকাশক: সমকাল

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুবাদে এর সঙ্গে আমার সখ্য অনেক দিনের। খেলোয়াড় থেকে ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার পরও স্টেডিয়ামটি দেখার সুযোগ হয়েছে। তার আলোকেই এ লেখার অবতারণা।

এই স্টেডিয়াম সংস্কার করতে কত দিন লাগে? সবচেয়ে বড় কথা, এর এত সংস্কার করতে হয়? একবার ভালোভাবে সংস্কার করলে তো যুগ যুগ ধরে চলে যাওয়ার কথা। অথচ কয়েক বছর পরপরই সংস্কারের নামে স্টেডিয়ামের খোলস বদলানো হয়। আসলে সংস্কার না ছাই। এগুলো হলো টাকা মারার ধান্দা! সংস্কারের নাম ওঠা মানেই শত কোটি টাকার বাজেটের পাশে সরকারি সিলমোহর পড়া। 

চলমান ম্যারাথন সংস্কারের কথাই ধরুন। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ৯৮ কোটি টাকা বাজেটে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার, যার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল পরের বছরের জুন। পরে সময় বাড়িয়ে সেটা ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তাতেও হয়নি। এর পর সময় বাড়ার সঙ্গে বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে বাজেটের অঙ্কও। সর্বশেষ ৫৭ কোটি টাকা বাজেট বাড়িয়ে মোট ১৫৫ কোটি টাকায় ২০২৪ সালের জুনে সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। জুন পার হয়ে সেপ্টেম্বর চলছে। এখন বারবার সময় বাড়িয়ে প্রকল্প শেষের সময় ধরা হয়েছে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত কোনো রকম একটা গোঁজামিল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারে! কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজেট বাড়িয়ে নেওয়ার আর সুযোগ দেখছি না।

স্টেডিয়ামটি সংস্কারের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সংস্থাটি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে পরিচিত। ফুটবল আর অ্যাথলেটিক্সের জন্য স্টেডিয়ামকে বিশেষভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ ফুটবল ড্রেসিংরুমে কয়টা চেয়ার রাখা প্রয়োজন, সেটাই যেন জানা নেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। ২৩টি চেয়ার বসানোর কথা থাকলেও প্রথমে সেখানে বসানো হয় ১৬টি। 

শুষ্ক মৌসুমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম পানি দিয়ে সবুজ রাখার জন্য প্রথমে যে স্প্রিঙ্কলার বসানো হয়েছিল, সেগুলো দেখতে হকি মাঠের চারদিকে বসানো স্প্রিঙ্কলারের মতো। অথচ বসুন্ধরা কিংস একটা ক্লাব হয়েও তাদের কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়ামে কত সুন্দর স্প্রিঙ্কলার বসিয়েছে! বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব তো তাদের অনুশীলন মাঠেই বসিয়েছে স্প্রিঙ্কলার এবং তা শোনামতে, এ স্টেডিয়ামের তুলনায় অনেক কম খরচেই করেছে। গণমাধ্যমের বরাতে এসব বিষয় দেশের সাধারণ মানুষ শুনে এ স্টেডিয়াম নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠে। 
এ তো গেল শুষ্ক মৌসুমের কথা। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা একেবারে বেগতিক। পাস দিলে আটকে যায় বল। খেলা শেষে সবার প্যান্টের রং হয় কালো। পেছন থেকে জার্সি দেখে চেনার উপায় থাকে না কে কোনটা! যেন কাদামাটিতে গড়াগড়ি করে জবরদস্তি ফুটবলের বিজ্ঞাপন করে মাঠ ছাড়েন খেলোয়াড়রা।

জাতীয় স্টেডিয়াম হলেও এখানে চলে খালি পায়ে ফুটবল, কাউন্সিলর কাপ ফুটবল, কনসার্ট, সবজি চাষসহ আরও কত কী! ছোট অঙ্কের টোলের বিনিময়ে স্টেডিয়ামকে বাইপাস রাস্তা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা দেখা যায়। দোকানপাট থাকে লোকে লোকারণ্য। সেই দোকান নিয়েও কত নোংরামি! সম্প্রতি স্টেডিয়ামটি সরেজমিন দেখতে গিয়েছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। দোকান বরাদ্দের দুর্নীতি দেখে তিনি তো রীতিমতো তাজ্জব বনে গেছেন! পরে তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে আমাকে এনে কেউ দুর্নীতির মহাসাগরে ছেড়ে দিয়েছে। আজ এনএসসির অধীনে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দোকান পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ২০-২২ টাকা/বর্গফুট হিসেবে এনএসসির কাছে ভাড়া গেলেও সরেজমিন গিয়ে জানতে পারলাম দোকানগুলো ১৭০-২২০ টাকা/বর্গফুট করে ভাড়া দিচ্ছে। বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে সরকার। অর্থাভাবে ফেডারেশন চলছে না, টুর্নামেন্ট হয় না, মাঠের সংস্কার হয় না। অথচ বছরের পর বছর এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি গেছে।’ 

এ স্টেডিয়ামে ফুটবল, ক্রিকেট, হকির মতো জনপ্রিয় খেলার বড় বড় আয়োজন হয়েছিল। কত রথী-মহারথীর পা পড়েছে এর বুকে! বিশ্ব ফুটবলের দুই বরপুত্র জিনেদিন জিদান ও লিওনেল মেসির খেলার স্মৃতি তো এখনও তরতাজা।
২০০৬ সালে জিদানের আগমন উপলক্ষে দেশের সমর্থকপ্রিয় দুই ক্লাব আবাহনী আর মোহামেডানের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মধ্যকার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ বছর পরে স্টেডিয়ামটি কী অবস্থায় থাকার কথা ছিল, আর কী অবস্থায় আছে?

রাশেদুল ইসলাম: জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার