ঢাকা    সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪   রাত ১১টা ০৫ মিনিট   গণমাধ্যমের শিরোনাম

অনিবার্য ইশতেহারের কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই

প্রকাশক: নয়া দিগন্ত

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অনিবার্য ইশতেহারের কবি হিসেবে পরিচিত দেশের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার, সাহিত্যিক ও প্রকাশক কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

রোববার (৩০ জুন) রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন কবির ছোট ছেলে আহমদ শামিল।

মরহুমের সালাতুল জানাযা আজ সোমবার জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে বাদ যোহর (জামায়াত ১.১৫) অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় সালাতুল জানাযা বাদ আসর ৫.৩০ গাজীপুর জেলা কালিগঞ্জের নিজ বাড়ি-সংলগ্ন বড়গাঁও বাইতুল উলুম আলিম মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে শনিবার রাতে স্ট্রোক করে রাজধানীর ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।

আসাদ বিন হাফিজ ১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার অন্তর্গত বড়গাও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাফিজউদ্দীন মুন্সী এবং মা জুলেখা বেগম।

তিনি আদর্শিক দিক দিয়ে কবি ফররুখ আহমদের অনুসারী। তার সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অণুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সৃজনশীলতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবহারেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি ছিলেন ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক, ছড়াকার ও সাহিত্যিক, প্রকাশক এবং সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক (৩য়) পরিচালক। তার বহু ইসলামী গান ও কবিতা নতুন প্রজন্মের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে।

তার সাহিত্যে বিপ্লবী চিন্তা-চেতনারও প্রকাশ ঘটেছে। তিনি ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, শিশু সাহিত্য, গবেষণা, সম্পাদনা ইত্যাদি সাহিত্যের সব শাখাতেই কবি আসাদ বিন হাফিজ রেখেছেন তার অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর। তিনি প্রায় ৮১টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। কবি আসাদ বিন হাফিজ তার বর্ণাঢ্য কর্ম ও সাহিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

শোক

বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি

কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমির সভাপতি আবেদুর রহমান এবং সেক্রেটারি ইবরাহীম বাহারী। বিবৃতিতে তারা কবির বিশুদ্ধ ধারার কাব্য চর্চার অসামান্য অবদানের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, আসাদ বিন হাফিজের কবিতা,গান, গল্প ও প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছে। এদেশের বিশ্বাসী তরুণদের আত্মচেতনাবোধ জাগ্রত করেছে। তিনি ধর্ম-বর্ণ দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষেকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন তার অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম দ্বারা। বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি মহান আল্লাহর কাছে কবি আসাদ বিন হাফিজের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের ধৈর্যধারণের শক্তি কামনা করেছেন।

আধুনিক কবিতা পরিষদের শোকবার্তা

আশির দশকের অন্যতম কবি, কবিতা বাংলাদেশ এর অন্যতম সহ-সভাপতি কবি আসাদ বিন হাফিজের মৃত্যুতে আধুনিক কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোশাররফ হোসেন খান ও সেক্রেটারি কবি হেলাল আনওয়ার শোক জানিয়েছেন। শোকবার্তায় তাঁরা উল্লেখ করেন, কবি আসাদ বিন হাফিজ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি, গীতিকার, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম সফল সংগঠক ও প্রকাশক। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিলো অনন্য। তাঁর সাহিত্যে বাংলার মুসলিম সমাজের পুনর্জাগরণ এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা প্রকাশ পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে উচ্চতর ডিগ্রি লাভকারী এই বিদগ্ধ কবির প্রায় ৮০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের আদর্শিক ধারায় বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
আমরা কবি আসাদ বিন হাফিজের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র

কবি আসাদ বিন হাফিজের ইন্তেকালে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি যাকিউল হক জাকী, সেক্রেটারি মাহবুব মুকুল।

নেতৃদ্বয় বলেন কবি আসাদ বিন হাফিজ সাহিত্যের সব শাখাতেই অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের সুস্থ ধারার সাহিত্য সংগ্রামে কবি আসাদ বিন হাফিজ এক কিংবদন্তী।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি